বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:আবার ভার্চুয়াল সভা বিজেপির। এবার মূল বক্তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। আর এই সভা থেকেই তাঁর নিশানায় ছিল বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে এই রাজ্যের সরকার। এই শ্রমিকদের নিয়ে কোনও তথ্যই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়নি। তাই পরিযায়ী শ্রমিকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কোনও এক রহস্যজনক কারণে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যবাসীকে পেতে দিতে চান না এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে রাজ্যের মানুষ বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় সুবিধা পান না।
উল্লেখ্য, লকডাউন সময়েই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনই ছটি রাজ্যের ১১৬টি জেলার ওই প্রকল্পে যুক্ত থাকার কথা তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তালিকায়া ছিল না বাংলার নাম। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পশ্চিমবাংলা সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কোনও তথ্যই দিল্লিকে জানায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি রাজ্যের মন্ত্রী থেকে তৃণমূল সাংসদ, নেতা —কেউই। তাঁরা এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। বঞ্চনার অভিযোগ এনেছিলেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।
রবিবার ভার্চুয়াল সভায় সে কথারই স্পষ্ট জবাব দেন নির্মলা সীতারমণ। জানিয়ে দেন, বাংলাকে সাহায্য করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সবসময়ই প্রস্তুত। কিন্তু রাজ্য সরকারই নানা ভাবে সেইসব সাহায্য নেওয়ার পথ এড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু এ ব্যাপারেই নয়, বাংলায় বিনিয়োগ নিয়েও এদিন মুখ খোলেন নির্মলা। পরিষ্কারই জানান, পশ্চিমবাংলায় কেন এতদিন বিনিয়োগ হয়নি, সেটাই আশ্চর্যের। এর পর তিনি নিজেই সেই কারণ উল্লেখ করে বলেন, ‘পশ্চিমবাংলায় গণতন্ত্র নেই। বিরোধী দলগুলির কর্মীদের নানা ধরনের মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে এই প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখানে হিংসার রাজনীতি চলছে। তাই শিল্পপতিরা এখন এই রাজ্যে বিনিয়োগে ভয় পান।’
তবে এর পাশাপাশি নির্মলা এ কথাও পরিষ্কার জানিয়ে দেন, শিল্পপতিরা এই রাজ্যে বিনিয়োগ করার জন্য টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই তাঁরা রাজ্যে লগ্নি করবেন। সেইজন্য যে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল দরকার, সেই ইঙ্গিতও এদিন তিনি দেন। জানান, দেশের সব রাজ্যের শিল্পপতিরাই বিনিয়োগের জন্য নতুন জায়গা খুঁজছেন। সেইদিক থেকে বাংলা তাঁদের কাছে আদর্শ স্থান। তাঁরা চান, হিংসামুক্ত পরিবেশ। রাজনৈতিক নেতারা যাতে কথায় কথায় মাতব্বরি না করেন, কাজের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করেন, সেই রকম অবস্থা তৈরি হলেই তাঁরা লগ্নি করবেন। তাই বাংলায় যে বেশি শিল্প আসার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে, সে কথা তিনি মনে করিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, দশ বছর ধরে রাজ্যে শিল্প টানার জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকগুলি শিল্প সম্মেলনও হয়েছে কলকাতা ও দিঘায়। অনেক শিল্পপতিই রাজ্যে লগ্নির আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাতে রাজ্যে লগ্নির চেহারায় তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। শিল্প সম্মেলনগুলিতে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে যে সব প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছে, তার সামান্যই বিনিয়োগ হয়েছে রাজ্যে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, লকডাউনের পর রাজ্যে শিল্পের চেহারা আরও খারাপ হতে পারে। সেইদিক থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।